Postal Zip Codes (postcode) for Shariatpur District
Author Archives: masud
Mymensingh Division |
|||
Jamalpur | Mymensingh | Netrokona | Sherpur |
Rangpur Division |
|||
Dinajpur | Gaibandha | Kurigram | Lalmonirhat |
Nilphamari | Panchagarh | Rangpur | Thakurgaon |
Sylhet Division |
|||
Habiganj | Moulvibazar | Sunamganj | Sylhet |
Barisal Division |
|||
Barguna | Barisal | Bhola | Jhalokathi |
Patuakhali | Pirojpur |
Chittagong Division |
|||
Bandarban | Brahmanbaria | Chandpur | Chittagong |
Comilla | Cox’s Bazar | Feni | Khagrachari |
Lakshmipur | Noakhali | Rangamati |
প্রাথমিক পরিচয়ঃ স্বনামধন্য নট,নাট্যকার,চলচ্চিত্রকার, পরিচালক অভিনেতা,গীতিকার , সুরকার আর সংগীত শিল্পির নাম তুলসী লাহিড়ী। এক কথায় তিনি ছিলেন অসম্ভব প্রতিভার অধিকারী। নাটক থেকে শুরু করে চলচ্চিত্র যে জায়গায় তিনি স্পর্শ করেছেন সবই যেন সোনা হয়ে যেত । তার সংস্পর্শে এসে অনেক প্রতিভাবান শিল্পী অভিনেতা আর নট-নটীর উদ্ভব হয় । সমকালীন শিল্পীগোষ্ঠীর আদর্শ ছিল তুলসী লাহিড়ী ।
জন্ম ও বংশ পরিচয়ঃ বহুমাত্রিক গুনের অধিকারী তুলসী লাহিড়ী ১৮৯৭ সালে গাইবান্ধা( তৎকালীন রংপুর ) জেলার সাদুল্লাপুর উপজেলার নলডাঙ্গা গ্রামের জমিদার পরিবারে জন্ম নেয় । তুলসী লাহিড়ীর প্রকৃত নাম হেমেন্দ্র চন্দ্র লাহিড়ী।তার বাবার নাম সুরেন্দ্র চন্দ্র লাহিড়ী এবং মাতার নাম শৈবালা দেবী । তুলসী লাহিড়ীর ছোট দুই ভাইয়ের নাম গোপাল লাহিড়ী ক্লারিওনেট এবং শ্যামাদাস লাহিড়ী এসরাজ ।
শিক্ষা জীবনঃ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে তার পড়াশুনার জীবন শুরু । কিন্তু তা বেশি দিন চলতে পাড়েনি স্কুলের অন্যান্য বন্ধুদের সাথে “কার্জন বিরোধী” আন্দোলনে সামিল হলে তিনি পুলিশী নজরে পড়েন । তাই কোচ বিহারে পিতৃদেবের করদমিত্র রাজ্যে ব্রিটিশ শাসনের বাইরে চলে যান । কিন্তু কোচবিহারে কলেজ তখন প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই নাম পরিবর্তন করে বিহার প্রদেশের এক কলেজে ভর্তি হন। সেই থেকে তার নাম হেমেন্দ্র লাহিড়ী থেকে হয়ে যায় তুলসী লহিড়ী । বিহার থেকে কৃতিত্বের সাথে বি,এ পাশ করার পর তিনি কলকাতায় চলে যান । কলকাতা আইন কলেজ থেকে তিনি বই, এল পাশ করেন।
কর্মজীবনঃ সঙ্গীতঙ্গ তুলসী লাহিড়ী কর্মজীবনের শুরুতে আইন ব্যবসাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। প্রথমে তিনি নিজ এলাকা রংপুরে আইন ব্যবসা করেন । পরে তিনি চলে যান সেখানকার আলিপুর কোর্টে ওকালতি শুরু করেন । এরপর তিনি ঐতিহ্যবাহী নাট সংগঠন রংপুর নাট্য সমাজের সাথে যুক্ত নন। নাট্যজীবনের প্রতি অধিক ভালোবাসায় তিনি আইন ব্যবসা ছেড়ে দেন। প্রথম যাবত অভিনয় ,পরে নাট্যপরিচালক পর্যন্ত হন এবং নাটক রচনা করতে শুরু করেন। তার খ্যাতির স্বরূপ তিনি “হিজ মাস্টার্স ভয়েজ ও মেগাফোন” গ্রামোফোন কোম্পানিতে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত হন। পরে তিনি চলচ্চিত্রের সাথে নিযুক্ত হন।
বিবাহ বন্ধন ও পারিবারিক জীবনঃ বহুগুণের অধিকারী তুলসী লাহিড়ী তিন বিয়ে করেন । তার পুত্র ও দুই কন্যার জননী। তার এক পুত্রের নাম দীনেন্দ্র চন্দ্র ওরফে হবু লাহিড়ী । কমলা ঝরিয়ার সাথে গান অভিনয়ের কাজ করতে করতে তাদের মধ্যে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টি হয় । কমলা ঝরিয়া ছিলেন তৎকালীন সময়ের শ্রেষ্ঠ শিল্পীদের একজন । কমলা ঝরিয়া প্রথম দুটি গানের সুর করেন তুলসী লাহিড়ী। এরপর তিনি তুলসী লাহিড়ীর অসংখ্য লেখা ও সুর করাগান করেন। এভাবে তাদের সম্পর্ক গাঢ় হয়। এ সম্পর্ক একসময় তাদেরকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে। কিন্তু তুলসী লাহিড়ীর পরিবার তাদের এ সম্পর্ক মেনে নিতে পারেনি। তাই তুলসী লাহিড়ী তার দ্বিতীয় স্ত্রী সন্তানদের ফেলে কমলা ঝরিয়াকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন । কমলা ঝরিয়া ও তুলসী লাহিড়ী সমাজ সম্পর্কের বাইরে এক কীর্তিমান শিল্পের গড়ে তুলেন। কিন্তু তৎকালীন সমাজ ব্যবস্থা তাদের সম্পর্কে নানা কুৎসা রটনা করতে থাকেন । তুলসী লাহিড়ীর বাবাকে বিভিন্ন লোক চিঠির মাধ্যমে গালি গালাজের বার্তা পাঠাতে থাকে । এই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তুলসী লাহিড়ী পরিবার তাদের সম্পর্ক মেনে নিলে কমলা ঝরিয়াকে তিনি কলকাতার ১৫৮/সি রাসবিহারী এভিনিউয়ের একেবারে সদর রাস্তার পাশে একটি বেশ বড়োসড়ো তিনতলা বাড়ি কিনে দেন ।তিরিশের যুগের গোড়ার দিকে যে সম্পর্কের সূচনা তা তুলসী লাহিড়ীর মৃতুকাল অর্থাৎ ১৯৫৯ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন ছিল। সেখানে ছিল ভালোবাসা আর অগাঢ় বিশ্বাসের বসতি । সমাজের বিভিন্ন মহলের অপচেষ্টাও তাদের এ সম্পর্কে সামান্য চির ধরাতে পারেনি।
নাট্যজীবনঃ নাট্যকার এবং নাট্যঅভিনেতা হিসেবেই প্রথম পরিচয় লাভ করেন তুলসী লাহিড়ী। ঐতিহ্যবাহী নাট সংগঠনের সাথে যুক্ত হওয়ার পর নাটকে হাতেখড়ি হয়। তুলসী লাহিড়ী অভিনিত প্রথম নাটকের নাম “কর্নাজুন” ।এরপর তিনি একে একে অভিনয় করেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের “চিরকুমার সভা” শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের “দত্তা” প্রভৃতি নাটকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ,মার্কসবাদী দৃষ্টিভঙ্গি এবং তৎকালীন সমাজের নানা সমস্যা আর অভাব অনটনকে চিত্রায়িত করার জন্য নাটক রচনা করতে শুরু করেন। তিনি রচনা করেন দুঃখীর ইমাম(১৯৪৭), ছেড়াতার(১৯৫০), মায়ের দাবি (১৯৪১), পথিক(১৯৫১), লক্ষ্মীপ্রিয়ার সংসার(১৯৫৯), বাংলার মাটি(১৯৫৩), ঝড়ের নিশান(১৯৬০)। তুলসী লাহিড়ী বিরচিত সর্বশেষ নাটক “ক্ষনিকের অতিথি”। তিনি প্রথমে “আনন্দম” ও পরে “রূপকার” নামে দুটি নাট্যদল গড়ে তুলেন। তার সবগুলি নাটবই ছিল দর্শক নন্দিত । নাটকগুলো তিনি নিজেই মঞ্চস্থ এবং অভিনয় করেন। বাংলা সাহিত্যের নবধারার সৃজন কাল বলা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কে তুলসী লাহিড়ী রেখেছেন অগ্রণী ভূমিকা।
সঙ্গীত জীবনঃ প্রখ্যাত গীতিকার ,সুরকার ও গায়ক তুলসী লাহিড়ীর সঙ্গীত চর্চা হাতেখড়ি হয় পিতার কাছ থেকে। প্রথমে তিনি রংপুরের বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান এবং পূজার অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করতেন। তিনি ছিলেন রংপুর ইন্সটিটিশন ক্লাবের সদস্য। কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় আত্ননিয়োগ করেন সঙ্গীত চর্চায় । গান শিখের কানাকৃষ্টের কাছে। এরপর ওস্তাদ সালমত আলী খানের কাছে শিখেন উচ্চসংগীত । তাকে গান শিখার এই সুবর্ণ সুযোগ করেদেন গায়ক অতুল প্রসাদ সেন। সর্ব প্রথম তার স্বরচিত দুটি গান গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া(হিজ মাস্টার্স ভয়েজ) থেকে করান তুলসীবুবু। এতে তাকে সহায়তা করেন উস্তাদ জমিরুদ্দিন সরকার । এরপর তাকে তার পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি । “হিজ মাস্টার্স ভয়েজ ও গ্রামোফোন কোম্পানিতে” কাজী নজরুল ইসলামের সাথে সঙ্গীতে কণ্ঠ মিলান । সেই সুবাদে মঞ্চস্থ বিভিন্ন নাটকে সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। এসব সঙ্গীতের বেশী ভাগই ছিল রবীন্দ্রনাথের। তুলসী লাহিড়ী প্রথম সুর সংযোজনা করেন আর্ট – থিয়েটারের “স্বরম্বরা” নাটকে,”যমুনা পুলিশে” ছায়াছবির গান তিনি রচনা করেন । তার সংস্পর্শে এসে কমলা ঝরিয়া খ্যাতির শীর্ষে অবস্থান করেছেন । কমলা ঝরিয়ার প্রথম দুটি গান “প্রিয় যেন প্রেম ভুল না” ও “নিঠুর নয়ন –বান কেন হান” তুলসী লাহিড়ী সুর করেন। তৎকালীন সময়ের আলোর দৃষ্টিকারী গায়িকা ইন্দুবালা,আঙুরবালা, আশ্চর্য ময়ী ,হরিমতী প্রভৃতি সবাই তুলসী লাহিড়ীর লেখা সুরকরা গান গেয়েছেন।
চলচ্চিত্র জীবনঃ যুগনায়ক তুলসী লাহিড়ী নির্বাক যুগের চলচ্চিত্রের অভিনয় করেন । সর্বপ্রথম তুলসী লাহিড়ীকে চলচ্চিত্রের পর্দায় দেখা যায় “চপু”ছবিতে যেটি পরিচালনা করেছিলেন হীরেন্দ্রনাথ বসু। তৎকালীন যুগের শ্রেষ্ঠ হাস্যরসাত্নক অভিনেতার নাম ছিল তুলসী লাহিড়ী । তার প্রথম ছায়াছবি “মনিকাঞ্চন”।“যমুনা পুলিশে” ছায়াছবিটির চিত্রকাহিনীর রচিতা তিনি। “রিক্তা” ও “মনিকাঞ্চান” ছবির চিত্রনাট্য এবং অভিনয় করেন তুলসী লাহিড়ী । পঞ্চাশটির ও বেশি ছবিতে অভিনয় করেন তুলসী লাহিড়ী।
মৃত্যুঃ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের যুগনায়ক তুলসী লাহিড়ী একাধারে ছিলেন সফল মঞ্চ অভিনেতা, চিত্রাভিনেতা,নাট্যকার,সুরকার ,সঙ্গীত পরিচালক ,চিত্রনাট্যকার এবং চিত্রপরিচালক । কমলা ঝরিয়ার রাসবিহারী এভিনিউয়ের বাড়িতেই ১৯৬৯সালের ২২শে জুন শেষ নিঃশাস ত্যাগ করেন তুলসী লাহিড়ী।