নব্য ইংল্যান্ডের প্রথম দ্বন্দ্বঃ পিকুয়োট যুদ্ধ

পিকুয়োট যুদ্ধ

নিয়াজ মাহমুদ সাকিব
ওয়াম্পাম শিল্প Image source: Indian Country today

পিকুয়োট যুদ্ধ (১৬৩৬-১৬৩৭) আদতে ম্যাসাচুসেটস উপসাগর,কানেকটিকাট এবং সায়ব্রুক উপনিবেশ থেকে আগত নেইটিভ আমেরিকান,  ইংরেজ যুদ্ধবাজ দখলদার ও ন্যারানগ্যাসেট এবং মহেগান সহ অনুল্লেখযোগ্য কিছু রাজাকার সম্প্রদায় সম্মিলিত সংঘবদ্ধ জোটের সঙ্গে পিকুয়োট জাতির  অস্তিত্বের দ্বন্দ্ব। যে দ্বন্দ্ব বাণিজ্যের, যে দ্বন্দ্ব নিয়ন্ত্রণের, পিকুয়োট জাতির অস্তিত্বের,যে দ্বন্দ্ব অযাচিত দখলদারিত্বকে শক্ত হাতে দমনের, যে দ্বন্দ্ব প্রতিশোধের, যে দ্বন্দ্ব ওয়াদা রক্ষার।

তবে ইংলিশ আর নেইটিভ আমেরিকান রাজাকারদের সংঘবদ্ধ এ মিত্রবাহিনী   নিউ  ইংল্যান্ডের ইংলিশদের একের পর এক উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার প্রধান  প্রতিবন্ধক  পিকুয়োটদের উচ্ছেদ করে দিতে সক্ষম হয়েছিলো।

তবে এই পিকুয়োটরা কারা? পিকুয়োটরা হলো আলগুনকুইয়ান ভাষী নর্থ আমেরিকান ইন্ডিয়ান,থেমস উপত্যকায় যাদের বসবাস ছিল। এই থেমস উপত্যকাই বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের কানেক্টিকাট প্রদেশ।

 

ব্রিটিশ জাতি পুরো বিশ্বজুড়ে একের পর এক উপনিবেশের জন্ম দিয়ে যাওয়া জাতি।পিকুয়োট যুদ্ধের প্রচ্ছন্ন কারন বাণিজ্য,নিয়ন্ত্রণ আর দখলদারিত্ব। তৎকালীন সময়ে, সপ্তদশ শতাব্দীর প্রথম ভাগে আমেরিকার পশমী চামড়ার বাণিজ্য, অলংকার আর ওয়ামপামের ব্যাবসা রমরমা। আমেরিকা থেকেই ফোরট অরেঞ্জ (কমলা দুর্গ), ম্যারিমাউন্ট প্লাইমাউথ,অ্যামস্টারডাম বাণিজ্যকুঠীসহ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তো! আর যেই পথ (রুট) দিয়েই দিনে দিনে এই ব্যবসার প্রসার  ঘটেছে , সেই পথ যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তাহলেই তো ভাঁড়ে মা ভবানী হয়ে আর থাকতে হবেনা।

স্থানীয় আমেরিকান হোক, আর ইউরোপীয়ান হোক, উভয়েই যথেষ্ট কাঠখড় পুড়িয়েছে বিশ্বের সবথেকে লাভজনক এই রুট নিয়ন্ত্রণের। এই রুটগুলোতে প্রভাব প্রতিপত্তি নিয়ে প্রধান যে চারটি চক্র দলাদলি করতো, সে চক্রগুলো যথাক্রমে, ডাচ (নব্য নেদারল্যান্ড), পিকুয়োট, নারানগ্যানসেট আর ব্রিটিশ চক্র। ডাচরা মূলত নিয়ন্ত্রণ করতো হাডসন নদী! কিন্তু এতে তাদের যা লাভ আসতো, তা  আশানুরূপ তো ছিলনা বটেই। উপরন্তু, যতোদিন না পর্যন্ত তারা বেশি লাভ এর গোপন রহস্যের ( উত্তর আমেরিকার আদিবাসীদের তৈরি করা অলংকার ওয়াম্পাম [পরবর্তীতে মুদ্রা] এর লাভজনক ব্যবসা) কথা জানতে পেরেছে, ততোদিন তাদের এই একরকম দুর্দশাতেই কাটাতে হয়েছিলো । ওই অলংকারিক সামুদ্রিক খোলাগুলোই ডাচ তথা হল্যান্ডের মানুষগুলো মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করতো। সমুদ্রের কাছে অল্প দামে কিনে বাইরে বেশিতে বিক্রি আর কি! আর এই পিকুয়োটরাই নিয়ন্ত্রণ করতো ওয়াম্পাম শিল্পের সিংহভাগ। ধীরে ধীরে তারা নিজেদের পরিধিও বাড়াতে লাগলো! আস্তে আস্তে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্যিক অঞ্চলগুলো এক এক করে নিজেদের করায়ত্ত করতে লাগলো!  বাড়াতে লাগলো সামরিক শক্তি। রাজনৈতিক ক্ষমতার মেরুকরণ ও চলতে লাগলো একই গতিতে।আবার একই সঙ্গে বাকিদের (বিশেষ করে ডাচ) সাথেও বাণিজ্যিক সম্পর্ক উন্নয়নেও কাজ চলছিলো!

 

ন্যারাগ্যানসেটেও অল্প হলেও ওয়াম্পাম শিল্পের চল ছিল। কিন্তু তাদের অঞ্চল থেকে এই শিল্পের বিকাশ ঘটাতে চাইলে স্বাভাবিকভাবেই তারা পিকুয়োটদের সাথে অঘোষিত এক টানাপোড়েনের মধ্যে পরে যাবে। ঠিক একই সময়ে, প্লাইমাউথ কলোনির ওয়াম্পাম শিল্প এক সাক্ষাৎ ধ্বসের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো আর নব্য ইংল্যান্ডে ততোদিনে এই শিল্প বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এবং তারাও নতুন করে নিজেদের পরিসর বাড়ানোর চিন্তাভাবনা করা শুরু করে দিয়েছিলো। এই ওয়াম্পামই আমেরিকার মুদ্রা ব্যবস্থার প্রথম মুদ্রা।

ফলশ্রুতিতে, ব্রিটিশদের একেবারেই নতুন প্রতিষ্ঠিত উপনিবেশ ম্যাসাচুসেটস বে কলোনির গভর্নর জন উইনথ্রোপ সহ প্রায় ১০০০ অবৈধ দখলদার অভিবাসী ১৬৩০ সালের “মহাস্থানান্তর” নাম করে প্রচ্ছন্ন অধিগ্রহণের উদ্দেশ্যে  এসে পিকুয়োটদের অঞ্চলে পাড়ি জমায়! উইনথ্রোপ এর পিউরিটান সরকার স্থানীয়দের থেকে প্রচুর পরিমাণ জমি কিনে নেয় নিজেদের থাকার সুব্যবস্থা করার জন্য। ১৬৩১ সালে ন্যানাংগ্যাসেট এর প্রধান শাসক ও তার পরিবার বোস্টনে যান বাণিজ্যিক সুসম্পর্ক স্থাপনের জন্য। আর তখন থেকেই তারা ইংলিশদের সঙ্গে অন্যদের বাণিজ্যিক লেনাদেনায় মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ শুরু করে। ওইদিকে ১৬৩২ সালে পিকুয়োটরা ডাচদের আমন্ত্রণ জানায় কানেক্টিকাট নদীর উপরে তাদের বাণিজ্য কুঠী স্থাপনের জন্য। এরপর আসে ১৬৩৩, একটা ভয়ংকর প্লেগ ছড়িয়ে পড়ে পুরো নব্য ইংল্যান্ড জুড়ে, সেই প্লেগই আবার আশেপাশে ছড়িয়ে পড়লে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয় পিকুয়োট আর ন্যারানগ্যাসেট উভয় পক্ষই! পরিণতিতে পিকুয়োট আর ন্যারানগ্যাসেটরা উভয়েই ক্রোশ ক্রোশ পিছিয়ে পড়ে। দুর্বল হয়ে যায়।

তবে ডাচরা তখন ন্যারানগ্যাসেট প্রধান টাটোব্যাম এর থেকে জমি কিনে নেয়, যে জমি দক্ষিণে উষঞ প্রস্রবণ ধারা প্রবাহিত করা নদীর খুব কাছাকাছি। “দ্যা হাউজ অফ গুড হোপ” নামে নতুন এক বাণিজ্যিক দুর্গ গড়ে তোলে ডাচরা সেখানে।  যে বাণিজ্যিক কুঠী উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিলো সকল আমেরিকান এবং ইউরোপীয়ানদের জন্য  ঝঞ্ঝাটমুক্ত বাণিজ্যের স্বার্থে।প্লাইমোথের কর্তাব্যক্তিরা আবার এই বাণিজ্যিক কুঠীর কথা শোনামাত্রই উপসাগরীয় নেতাদের সাথে বৈঠকে বসতে বোস্টন যায়। তারা ওই বৈঠকেই প্রস্তাব তোলে যে, তারা দুই পক্ষ মিলে “গুড হোপ” কুঠীর উত্তরে সম্মিলিত প্রয়াসে বাণিজ্য কুঠী স্থাপন করতে যাচ্ছে। এবং তা শুধুই ডাচদেরকে ভারী বর্ষণের জল (যা নদীতে এসে পড়ে) বঞ্চিত রাখার জন্য।কিন্তু বে লিডাররা প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এবং সাফ জানিয়ে দেয় যে, ওই ভূমি নিয়ে মাথা ঘামানো ঠিক হবেনা, আর তাছাড়া ওই ভূমিতে গিয়ে অনধিকার চর্চা করা পুরাই বেকার! অরণ্যে রোদন মাত্র! ওই ভূমি নাড়িয়ে চাড়িয়ে দেখার মতো যথেষ্ট গুরুত্ব পূর্ণ ও নয় বৈকি!”কথাটা উইনথ্রোপের! কিন্তু উইনথ্রোপ এই কথাটা পুরোটাই বানোয়াট ডাহা মিথ্যা কথা বলেছে। আসল সত্যটা হচ্ছে, বে হর্তাকর্তারা আদতে প্লাইমোউথ এর সাথে কানেক্টিকাট নদী শেয়ার করতে চাচ্ছিলো না।

উইনথ্রোপ তার সবথেকে অভিজ্ঞ ব্যবসায়ী জন ওল্ডহ্যাম এর নেতৃত্বে একদল চর পাঠায় পুরো এলাকাটাকে পর্যবেক্ষণ করে আসতে। পর্যবেক্ষণ তো করলোই , সাথে তারা একটা ভালো খবরও নিয়ে আসলো তার জন্য! হ্যাঁ, ওই জায়গাটা জবরদখল করা যায়! ওইদিকে আবার উইনথ্রোপ এর পরিকল্পনার ব্যাপারে পুরোপুরি অজ্ঞ থেকেই প্লাইমোউথ এর কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক গুড হোপ এর হুমকি থাকতেও নিজেরা নিজেরাই একদম গুড হোপ এর মাত্র এক মেইল উত্তরে বাণিজ্য কুঠী স্থাপনের কাজ শুরু করে দেয়। Bengali Shayari

 

Image Source: Piquotwar.org

এমন সময়ে পিকুয়োটরা ডাচদের সাথে করা চুক্তি ভঙ্গ করে কুঠীতে বাণিজ্য করতে আসা কিছু বিদ্রোহীদের মেরে ফেলে। আর এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে টাটোবেম কে আটকে রাখে ডাচরা! আর বেশ বড় রকম ক্ষতিপূরণ দিয়েই তাকে ছাড়িয়ে নিতে হয়েছে পরবর্তীতে। ক্ষতিপূরণ সঠিকভাবে পূরণ করা হলেও টাটোবেম কে আর বাঁচানো যায়নি! কারন টাকা পেলেও টাটোবেমকে তারা মেরে ফেলে। পিকুয়োটরাও এ ঘটনার প্রতিবাদে ইউরোপীয় এক বাণিজ্য জাহাজের নাবিক আর পুরো জাহাজের সব ক্রুদেরকে হত্যা করে প্রতিশোধের নগ্ন নৃত্যে মেতে ওঠে। আর এখানেই বাধে বিপত্তি! কারন দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ওই বাণিজ্য জাহাজের সবাই ইংলিশ, ডাচ নয়! আর যে বাণিজ্যিক জাহাজের নাবিককে মারা হলো, সেই জাহাজের মালিক এবং নাবিক দলের একজন সদস্য ছিল জন স্টোন! জন ষ্টোন এমনই এক বেখাপ্পা মেজাজের লোক ছিল যে, সে তার বেচে থাকার এক বছর আগেও প্লাইমৌথদের বাণিজ্য জাহাজ চুরি করে নিয়ে এসেছিলো, এমনকি প্লাইমৌথ এর গভর্নরকে ছুড়ি মেরে দেয়ার চেষ্টাও করেছিলো। বোস্টন এর পিউরিটানদেরকে মদ খাইয়ে ছেড়েছে সে, ব্যাভিচারের মেলা বসিয়েছিলো নিজের জায়গায়, তারপর বোস্টন এর এক অফিশিয়ালকে হত্যা করে! আর এতো এতো সবকিছুর পরে তাকে বে থেকে চিরতরে নির্বাসিত করে দেয়া হয়েছিলো!যার মরণে কেউ কোনোদিন শোক পালন করেনি!ভুলবশত ইংলিশ স্টোনকে হত্যার পরে পিকুয়োটরা আবারো ডাচদের সাথে পুনরায় বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করলেও তাতে খুব একটা লাভ হয়নি। মরার উপর খাঁড়ার ঘা দিতে আবার ন্যারনগ্যান্সেটরা পিকুয়োটদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে বসে। টাটোবাম এর নাতী, স্যাসোকাস, বর্তমান প্রধান, কনফেডারেশনের উপর খুব একটা নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেনি। ফলশ্রুতিতে, অন্যান্য কিছু সম্প্রদায় প্রধানের সাথে স্যাসোকাসের সম্পর্কের অবনতি ঘটে।  সবাই ভেতরে ভেতরে ফুঁসে উঠতে থাকে স্যাসোকাস আর পিকুয়োটদের বিরুদ্ধে। পিকুয়োটরা ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে সবার চক্ষুশূল। উপায়ন্তর না পেয়ে পিকুয়োটরা এবার ঘুরেফিরে সেই বোস্টনের নজর কাড়ার চেষ্টায়ই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়লো।

১৬৩৪ এর অক্টোবরে তারা বোস্টনে নিজেদের দূত পাঠায় ব্যবসার ব্যাপারে আলাপ আলোচনার প্রস্তাব নিয়ে! সেই প্রস্তাবে পিকুয়োটরা অফার করলো সব ধরনের বাণিজ্যিক সুবিধা, বাণিজ্যিক অধিকার, কানেক্টিকাটে বসতি স্থাপনের সুবিধা ও বন্ধুত্ব।

বোস্টন প্রস্তাবে রাজী কিন্তু শর্ত একটাই, জন স্টোনের ঘাতককে তাদের হাতে তুলে দিতে হবে।কারন ষ্টোনের সাথে সাথে আরো দুই জন যোদ্ধাকে ধরে নিয়ে গিয়েছিলো পিকুয়োটরা, সম্ভব হলে তাদের ফেরত দিতে হবে আর সাথে ন্যুনতম ৪০০ ওয়ামপাম দিতে হবে, যেখানে দূত প্রস্তাবে মাত্র অল্প কিছু ওয়ামপামের কথা উল্লেখ করেছিলো। দূত ও তার দল এতো এতো অসম্ভব এক একটা দাবির ব্যাপারে কোনোকিছু পাকা না করে বলে এসেছিলো যে, তারা স্যাসাক্যাস এর সাথে কঠিন কঠিন ওই দাবিগুলোর ব্যাপারে কথা বলে জানাবে তবে যে বিষয়গুলো নিয়ে ঐক্যমতে পৌঁছানো সম্ভব হয়েছে সেগুলো নিয়ে তারা চুক্তি করে এসেছে। এই চুক্তিটা নিঃসন্দেহেই তাৎপর্যবাহী।

বোস্টনের পিউরিটানদের কথানুযায়ী, চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়ে যাওয়া মানেই কার্যকরী হয়ে যাওয়া। তার মানে পিকুয়োটরা তাদের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে এবং চুক্তি অনুযায়ী যে যার জায়গা থেকে ওয়াদামাফিক সবকিছু পূরণ করবে। কিন্তু পিকুয়োটদের মধ্যে বেঁধে গেলো! পিকুয়োটদের নিজস্ব কাউন্সিল থেকে ওই চুক্তির ব্যাপারে নির্দিষ্ট কোনো দিক নির্দেশনা দেওয়া না থাকা সত্ত্বেও চুক্তিতে স্বাক্ষর করে আসার ব্যাপারে কাউন্সিলের কেউই সন্তুষ্ট হতে পারলো না। আর তাছাড়া , কোনো দূতেরই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে আসার কার্যকরী ক্ষমতা নেই। এতোসব অসন্তুষ্টির মাঝে তবুও শুরু হলো বাণিজ্য। কিন্তু ভাঁড়ে ভবানি! বোস্টনের পিউরিটানরা হায় হায় করছে, আমার ওয়াম পাম কই? চুক্তির সেই ওয়ামপাম কই? “। সুচ হয়ে ঢুকলো ব্রিটিশরা। তারা কানেক্টিকাটেও নিজেদের বসতি স্থাপন করলো আবার একই সাথে নদীর পাশেই তিনটা ইংলিশ টাউন এর গোড়াপত্তন করলো, যা প্রায় সবার জন্যই সমস্যার কারন হয়ে দাঁড়ায়।

১৬৩৬ এর গ্রীষ্মকাল, সমস্যা আস্তে আস্তে ঘণীভূত হওয়া শুরু করলো। পিকুয়োট কাউন্সিলেরই এক সম্প্রদায় প্রধান উনকা,স প্লাইমৌউথ বণিকদের কাছে নিজেদের কাউন্সিলের পরিকল্পনা ফাঁস করে দিলো যে পিকুয়োটরা নতুন টাউনগুলোতে হামলা চালানোর পরিকল্পনা করছে।

উনকাসের এই সতর্কবার্তা বোস্টনের ম্যাজিস্ট্রেট এতোটাই গুরুত্বের সাথে নিয়েছিলেন যে, তিনি সাথে সাথে সেইব্রুক বাণিজ্যকুঠী, দুর্গ প্রধান আর কানেক্টিকাটের গভর্নর উইনথ্রোপ জুনিয়রকে পিকুয়োট নেতাদের সাথে বৈঠকে বসার আদেশ দিয়েছিলেন এবং পূর্বে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী স্টোনের ঘাতকদের আর ৪০০ ওয়ামপামের দাবি তোলার জন্য দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন। আর ন্যয্য কথামতো যদি পিকুয়োটরা দাবি পূরণ না করে, তবেই শুরু খেলা! যে খেলা কূটনীতির, যে খেলা বিপ্লবের, যে খেলা প্রতিশোধের!

বৈঠকটা কেমন যেন এক ধোয়াশার মধ্যেই শেষ হলো। সবকিছু অস্পষ্ট! সুনির্দিষ্ট কিছু বেরিয়ে না আসাতে পিকুয়োটরা একরকম ধরে নিয়েছিলো যে, তারা যা করেছে,তাই সঠিক। আর তারা তাদের সেই স্বাক্ষরিত চুক্তির প্রতি যথেষ্ট সম্মান দেখাতে পেরেছে। এবং একই সাথে ইংলিশদের সাথেও খুব একটা ভালো যাচ্ছিলো না!মনোমালিন্য চলছেই! বে কলোনিতে পিকুয়োটদের জন্য বন্ধুত্ব শব্দটা নিষিদ্ধ হয়ে গেলো। সম্পর্ক অপরিবর্তিত রয়ে গেলো। কিছুদিন বাদেই ব্লক আইল্যান্ডে হত্যা করা হলো জন ওল্ডহ্যামকে। আর ব্লক আইল্যান্ড ছিল নার‍্যাংগ্যাসাট এর আওতাভুক্ত অঞ্চল। ক্যানোনিকাস খবর পাওয়া মাত্রই সমবেদনা ও দুঃখ প্রকাশ করে বোস্টনে দূত পাঠায় এবং চিঠিতে আরো লেখে যে, মিয়ান্তানামো ২০০ সৈন্য নিয়ে ইতোমধ্যেই এই হত্যার প্রতিশোধের জন্য বেরিয়ে পড়েছে। আর এহেন দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপাতে তারা আরো বললো যে, ঘাতকদের কয়েকজন পালিয়ে পিকুয়োটদের কাছে গেছে আশ্রয়ের জন্য। সম্ভাব্য মিথ্যা হলেও এই ইস্যুটাই গর্বিত পিকুয়োটদেরকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করতে ত্রূপের তাস বানিয়ে চালা হলো নতুন গুটি!

 

ক্যাপ্টেন এন্ডেকট কে নেতৃত্বে রেখে ৯০ জন স্বেচ্ছাসেবী সৈন্য শাস্তিমূলক অভিযানে পাঠিয়ে দেয়া হলো! এন্ডেকট আর তার সৈন্যদল প্রথমে ব্লক আইল্যান্ডে নোঙ্গর করে। তাদের উপরে নির্দেশনা ছিল যে, পুরুষ দেখামাত্রই মেরে ফেলতে হবে এবং নারী ও শিশুদেরকে জিম্মি করে নিয়ে আসতে হবে।দ্বীপবাসী সৈকতেই ছোটখাটো একটা প্রতিরোধ গড়ে তুললেও,দ্রুত বিলের পানির নিচে লুকিয়ে যায় মৃত্যু কিংবা জিম্মি হওয়া থেকে বাঁচতে।শেষমেশ, সৈন্যদের শুধুমাত্র পরিত্যক্ত গ্রামগুলো পুড়িয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো। আবারো সৈন্যদলকে একত্রিত করে, এন্ডেকট এবার তার মিশনের দ্বিতীয় অংশ সম্পাদনে পিকুয়োটদের দিকে অগ্রসর হলো নানাবিধ ক্ষয়ক্ষতির ক্ষতিপূরণ হিসেবে ১০০০ ওয়ামপাম,পূর্বে জিম্মি থাকা শিশু আর  ক্যাপ্টেন স্টোনের ঘাতকদেরকে ফিরিয়ে দেবার দাবি নিয়ে।

ইংলিশরা তীরের কাছাকাছি ভিড়লে তাদেরকে সাদর সম্ভাষণে স্বাগত জানানো হলেও পিকুয়োটরা ভালো খারাপ কোনো প্রতিক্রিয়া পায়নি, সদুত্তর তো দূরের কথা। স্বাভাবিকভাবেই, চিন্তিত হয়ে পড়ে পিকুয়োটরা। তারা এন্ডেকটের জাহাজে এক বয়স্ক পিকুয়োটকে কথাবার্তার কাজে পাঠালে ক্যাপ্টেন তাদের দাবিগুলো একে একে উত্থাপন করে। মুরুব্বি অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, এসব দাবি মানা সম্ভব নয়। কারন , তাদের বর্তমান প্রধান তথা টাটোবেম এর নাতী সাসোক্যাস ই যে জন স্টোনের ঘাতক!পিতৃ হত্যার প্রতিশোধের বশবর্তী হয়ে সাসোক্যাস ই যে হত্যা করেছিলেন ষ্টোনকে।

অসন্তুষ্ট , অতৃপ্ত অনুভূতি নিয়ে ইংলিশরা একজন স্থানীয় সম্প্রদায় প্রধানের অপেক্ষা করছিলো তীরে। অধৈর্য ইংলিশরা ক্রমেই অধৈর্য হয়ে উঠছিলো। ফাঁদে পড়ার আশঙ্কায় ধৈর্যহীন ইংলিশরা স্থানীয়দের উপরে প্রবল গুলি বর্ষণ শুরু করে। গ্রামবাসী দ্রুত পালিয়ে যায়। তবে এন্ডেকট বোস্টনে ফেরার আগে গ্রামবাসীর ঘরবাড়ি পুড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে যায়।

আর অ্যাংলো পিকুয়োট যুদ্ধ কেবলই শুরু হলো।

এভাবেই বেজে ওঠে অ্যাংলো পিকুয়োট যুদ্ধের দামামা।

 

 

 

বাংলাকোষে লিখুন, আয় করুন... [email protected] 
বিঃদ্রঃ বাংলাকোষ কোনো সংবাদপত্র নয়, এটি মূলত একটি আর্কাইভ। বাংলাকোষ এ প্রকাশিত সকল তথ্য কপিরাইট এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কোনো পূর্বানুমতি ছাড়া বাংলাকোষের কোনো তথ্য ব্যবহার করা যাবে না। তবে অব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সূত্রসহ ব্যবহার করতে পারবে।