ক্যালিফোর্নিয়ার যে গ্রামের বাসিন্দাদের অফিস ও বাজার হয় বিমানে চড়ে!

গ্যারেজ বা রাস্তায় সারি সারি গাড়ি দেখেছেন কিন্তু রাস্তা ভরা প্লেন আর প্লেন এমন দৃশ্য কি কখনও দেখেছেন? আর দেখলে কি অদ্ভুত লাগবে তাই না? কিন্তু অবাক করার বিষয় হচ্ছে যে এমন একটি গ্রাম রয়েছে যেখানে প্রত্যেকেরই আছে নিজস্ব বিমান।

তীব্র যানজট এখন শহুর জীবনের নিত্ত সঙ্গী। বাস, প্রাইভেট কার অথবা মোটরসাইকেল হোকই না কেন বিমান আর নৌযান ছাড়া সব যানবাহনকেই কম বেশি যানজটের মধ্যে পড়তে হয়। তাই অনেকেই হয়তো খায়েশ জাগে, যদি বিমানে চড়ে সব জায়গায় যেতে পারতাম! বিষয়টা অনেকের কাছে অসম্ভব আর স্বপ্ন মনে হলেও এমনটা বাস্তবেই হয় যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের বিশেষ এক গ্রামের বাসিন্দাদের বেলায়।

 

ক্যামেরন এয়ারপার্ক এর গ্রামটিতে ঢুকলেই দেখবেন, রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি বিমান। সেগুলো কোনো সংস্থার বা সরকারের নয়। ওখানে যারা বসবাস করেন, সবই তাদের নিজস্ব। এখানকার বাসিন্দারা কর্মস্থল-সহ বাজার করতে কিংবা বেড়াতে যান প্লেনে চড়ে। ক্যালিফোর্নিয়ার ক্যামেরন এয়ারপার্ক নামের ঐ গ্রামটিতে গেলেই এমন দৃশ্য চোখে পড়বে। জায়গাটি পুরোপুরি ব্যক্তিগত মালিকানাধীন। অনুমতি ছাড়া এখানে বাইরের কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয় না। ওখানকার কেউ বাইরের কাউকে আমন্ত্রণ জানালে তবেই প্রবেশ করা যায়।

 

জীবনযাত্রার এই পদ্ধতিটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের সময় থেকে শুরু করে যখন অনেকগুলো বিমানঘাঁটি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছিল এবং বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ অবসরপ্রাপ্ত সামরিক পাইলটদের জন্য আবাসিক এয়ার-পার্কগুলোতে বসবাসের জন্য ব্যবস্থা করেছিল।

 

পাইলটদের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি এবং শহরের উন্নয়নের ফলে,১৯৬৩ সালে নির্মিত এই আবাসিক এলাকায় বর্তমানে ১২৪ টি বাড়ি রয়েছে যার প্রত্যেকেরই বিমান এবং হ্যাঙ্গার রয়েছে। এখানকার রাস্তাগুলো ১০০ ফুট চওড়া করে বানানো হয়েছে, যাতে বিমানগুলো বাসিন্দাদের বাড়ির সামনে অবতরণ করতে পারে এবং বিমানবন্দরগুলোতে প্রবেশ করতে পারে। অর্থাৎ এই গ্রামের বাসিন্দারা বিমানবন্দরের রানওয়ে ব্যবহার করতে পারে।

 

আরও একটা মজার ব্যাপার হলো এই গ্রামের রাস্তার নামগুলো বিমান চালনার সাথে সম্পর্কিত, যেমন বোয়িং রোড, সেসনা ড্রাইভ এব আরও অনেক কিছু। ক্যামেরন এয়ারপার্কে বিমানে যাওয়া তেমন বড় কিছু নয়। এটি একটি গাড়ী চালানোর মত কাজ। প্রতিটি বাড়িই হ্যাঙ্গার দিয়ে তৈরি করা হয়। তাদের বাড়ির ভিতরে গ্যারেজের মতো বা বাড়ির সংস্পর্শে বাইরে এই হ্যাঙ্গার তৈরি করা হয়। প্লেন থাকা বাসিন্দাদের কাজের জন্য বাইরে যাওয়ার সময় গেট খোলার জন্য রিমোট ব্যবহার করা হয়। মূলত গ্যারেজের গেটগুলো বৈদ্যুতিক ব্যবস্থার মাধ্যমে তৈরি করা হয়।

 

ক্যামেরন পার্কের মতো ফ্লোরিডার স্প্রুস ক্রিক এয়ার-পার্ক প্রায় ৬৫০ টি বিমান নিয়ে গর্ব করে যার মধ্যে ব্যক্তিগত জেট থেকে ঐতিহাসিক বিমান পর্যন্ত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

এ ধরনের আবাসিক এলাকায় বসবাসকারীদেরকে ফ্লাই-ইন সম্প্রদায় বলা হয়ে থাকে। ফ্লোরিডার স্প্রুস  ক্রিক এ প্রায় ৫ হাজার জন বাসিন্দা, ১৩শ টি বাড়ি এবং ৭০০টি হ্যাঙ্গার নিয়ে গঠিত যা একটি ব্যক্তিগত এয়ারফিল্ডকে কেন্দ্র করে ঐ গ্রামের বাসিন্দারা আশ্চর্যজনকভাবে একটি ব্যতিক্রমী জীবন উপভোগ করে।

ক্যামেরন এয়ারপার্কের মতো এয়ারপার্ক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আরও অনেক রয়েছে; সংখ্যায়, আপনি ৪২৬ টি আবাসিক এয়ারপার্ক দেখতে পারেন। এটিও অনুমান করা হয় যে ফ্লোরিডায় ৫২ টি এয়ারপার্ক, ওয়াশিংটনে ৫০টি, ক্যালিফোর্নিয়ায় ২৮টি এবং ওরেগনে ২৩ টি এয়ারপার্ক রয়েছে।

 

বিমানে চড়া সম্প্রদায়দের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থাকে যেমন গল্ফ কোর্স, ঘোড়ায় চড়া সহ নানা বিশেষায়িত সুবিধা। সেখানে আপনি কোনো বাণিজ্যিক বা ব্যবসায়িক কার্যক্রম দেখতে পাবেন না। মূলত এরা এখানে বসবাস করে কিন্তু এদের কর্মস্থল থাকে দেশ বিদেশের বিভিন্ন এলাকায়।

 

লেখাঃ সাবরীন সুলতানা সুমিনূর

বাংলাকোষে লিখুন, আয় করুন... [email protected] 
বিঃদ্রঃ বাংলাকোষ কোনো সংবাদপত্র নয়, এটি মূলত একটি আর্কাইভ। বাংলাকোষ এ প্রকাশিত সকল তথ্য কপিরাইট এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কোনো পূর্বানুমতি ছাড়া বাংলাকোষের কোনো তথ্য ব্যবহার করা যাবে না। তবে অব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সূত্রসহ ব্যবহার করতে পারবে।