টয়লেট ব্যবহারের নিয়ামাবলি, বা স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেটের প্রয়োজনীয়তা কিংবা স্যানিটেশনের গুরুত্ব ইত্যাদি বিষয়াবলি নিয়ে হয়তো অনেককিছু শুনেছেন। তবে আপনি কি চিন্তা করতে পারেন টয়লেট ব্যবহারে মিলবে অর্থ? মানে রীতিমতো প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিয়েই করতে পারবেন অর্থ উপার্জন! সম্পূর্ণ ব্যাপারটাই হয়তো আপনার কাছে অদ্ভুতুরে শোনাচ্ছে। এমনই অচিন্তিত বিষয় বাস্তব করে দেখিয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার উলসান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জো জে ইয়ন।
বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর কোন কিছুই ফেলনা নয়। ফেলে দেওয়া ভাঙা কলমদানি বা পুরনো কাগজপত্র দিয়ে নানা রকমের শৈল্পিক কারুকাজ বরাবরই আমাদের মুগ্ধ করে। তবে মানুষের বর্জ্য থেকেও ‘বিদ্যুৎ শক্তি উৎপাদন করা সম্ভব’ এমন কথা কেই বা চিন্তা করতে পারে। অধ্যাপক ইয়ন হয়তো এমন ফেলে দেওয়া কিছু থেকে নতুন কিছু উদ্ভাবন করে তাক লাগিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বিশ্বকে। তিনি অবশ্য এতে সফলও হয়েছেন। মানুষের বর্জ্যতে থাকা মিথেন গ্যাসের উপস্থিতিকে তিনি কাজে লাগিয়েছেন। বিষয়টা আরো বিস্তারিত ভাবে ব্যাখা করছি পুরো লেখাটাতে।
টয়লেট ব্যবহার করে অর্থ উপার্জনের এই ধারণাটির পেছনে প্রধান কাজ করছে বায়োগ্যাস। বায়োগ্যাস হলো পচনশীল জৈববস্তুসমূহ হতে তৈরি গ্যাস। সব প্রাণীরই মল হতে প্রক্রিয়াজাতকরণের মাধ্যমে এ গ্যাস তৈরি করা যায়। পশুর গোবর ও অন্যান্য পচনশীল পদার্থ বাতাসের অনুপস্থিতিতে পঁচানোর ফলে যে গ্যাস তৈরি হয় তাই হচ্ছে বায়োগ্যাস। তবে গৃহপালিত বা বাণিজ্যিকভাবে পালিত পশুপাখি এবং মানব মল সহজলভ্য বলে এগুলোই বেশি ব্যবহার করা হয়।
এজাতীয় গ্যাসে অধিকাংশ পরিমাণই থাকে মিথেন গ্যাস।এছাড়া রয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইড(CO2)এবং অল্প পরিমানে হাইড্রোজেন সালফাইট এবং জলীয় বাষ্প থাকে। বায়োগ্যাস উৎপাদনের পর অবশিষ্ট আবর্জনাটুকু উত্তম জৈব সার হিসেবে বেশ কার্যকরী।
অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে কোন জৈব পদার্থকে পচানো হলে সেখান হতে বায়োগ্যাস উৎপাদিত হয়। এই প্রক্রিয়াকে এনারবিক ডাইজেশন (Anaerobic digestion) বলে। যার মাধ্যমে কিছু অণুজীব জৈব পদার্থকে ভেঙে মূলত মিথেন এবং কার্বন-ডাই অক্সাইড উৎপন্ন করে।
উলসান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক জো জে ইয়ন বলেন, প্রতিটি টয়লেটে বিশেষ ট্যাংক রয়েছে। মানুষের বর্জ্য সরাসরি সেখানে গিয়ে জমা হয়। এরপর সেখান থেকে মিথেন গ্যাস আলাদা হয়ে পাশের আরেকটি ট্যাংকে জমা হয়। সেখান থেকে সরাসরি চলে যায় পাশের আরেকটি ইউনিটে। যেখানে এই গ্যাস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
অর্থাৎ গ্যাস এবং জৈব সার কে আলাদা করে ফেলা হয়। প্রাপ্ত এই গ্যাস কে রুপান্তরিত করা হয় বিদ্যুৎ শক্তিতে।
পরিমাণ গ্যাস তৈরি হবে তার ওপর নির্ভর করে মিলবে পয়েন্ট। এই পয়েন্ট দোকানে দেখালেই মিলবে খাবার-পানীয়।
এই টয়লেট ব্যবহারে যে সুবিধা গুলো পাওয়া যাবে-
১। অল্প জায়গায় এই প্লান্ট তৈরি করা যায়৷ স্বাভাবিক অন্যান্য টয়লেটের চেয়ে অধিক জায়গার প্রয়োজন পড়ে না।
২। এ থেকে প্রাপ্য বায়োগ্যাসের বর্জ্য জৈবসার হিসেবে ব্যবহার করা যায়৷
৩।জ্বালানির জন্য গাছপালার উপর চাপ কম পড়বে।
৪।বায়োগ্যাস ব্যবহার করলে গ্রীনহাউজ গ্যাসের স্তর ক্ষয় কম হয় ।
৫। এই শক্তি ব্যবহারের ফলে মিথেন গ্যাস তৈরি হয় যা চাষের কাজে ব্যবহৃত হয়।
অধ্যাপক জো জে ইয়ন আরও বলেন, আমি সব সময়ই চেয়েছি ভিন্ন কিছু করতে। তাই মনে হলো এমন কিছু করি যেটা একই সাথে পরিবেশবান্ধব আবার অর্থও উপার্জন করা যাবে। সে ভাবনা থেকেই এই ভিন্নধর্মী টয়লেট এর উদ্ভাবন।
প্রতিবার এই টয়লেট ব্যবহার করার পর ব্যবহার কারীকে দেওয়া হবে নির্দিষ্ট পয়েন্ট। একদিনের জমা হওয়া পয়েন্টের সম্ভাব্য মূল্যমান হবে এক কাপ কফি কিংবা এক বাটি নুডুলস এর মূল্যমানের সমপরিমাণ। যেকোনো দোকানে এই পয়েন্ট দেখালেই অর্থ ছাড়াই মিলবে খাবার ও পানীয়।
উদ্যোক্তাদের জানিয়েছেন সারা বিশ্বে পরিবেশ বান্ধব এই টয়লেট ছড়িয়ে দেয়াই তাদের লক্ষ্য।
-মাহামুদুল হাসান