মাস্ক এখন পরিবেশ বিপর্যয়ের কারন

 

মাস্ক

পৃথিবীর নতুন বিপর্যয় মাস্ক

বর্তমানে পৃথিবী জুড়ে একটি আন্দোলন শুরু হয়েছে। তা হলো কীভাবে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে এই পৃথিবী নামক গ্রহকে রক্ষা করা যায়। এই আন্দোলন কে আরো বেগবান করতে ১৯৭২ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে স্টকহোমে বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং এর পর থেকে প্রতি বছর ৫ জুন দিনটি বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে। প্রতিবছর এ দিবসটি গুরুত্বের সাথে পালনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো জনসাধারণ তাঁদের পরিবেশের ভারসাম্য, পরিবেশের বিপর্যয় এবং পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে যাতে সচেতন হয়ে ওঠেন এবং সে সব সমস্যা সমাধানে যেন এগিয়ে আসেন, সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা। আধুনিক পৃথিবীর নিত্য নতুন প্রযুক্তি ও বিশ্বায়নের পরিমাণ বাড়ার সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক এ দূষণের তালিকায় পিছিয়ে নেই বাংলাদেশও।

বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দূষণ ও পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত তার একটি বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে প্রতি বছর যতো মানুষের মৃত্যু হয় তার ২৮ শতাংশই মারা যায় পরিবেশ দূষণ জনিত বিভিন্ন অসুখবিসুখের কারণে। অন্য দিকে সারা বিশ্বে এধরনের মৃত্যুর গড় মাত্র ১৬ শতাংশ। অর্থাৎ সারা বিশ্বের তুলনায় পরিবেশ দূষণের ফলে আমাদের মৃত্যু হার ১২ শতাংশ বেশী।

পরিবেশ দূষণের উপর করা বিশ্বব্যাংক কতৃক এক পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায় বাংলাদেশে ২০১৫ সালে প্রায় ৮০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে পরিবেশ দূষণের কারণে। তারা আরোও জানান, শহর অঞ্চলে পরিবেশ দূষণের মাত্রা উদ্বেগ জনক পর্যায়ে পৌছেছে।

 

পরিবেশ দূষণ কি? কেন হয়?

পরিবেশের ভৌত,রাসায়নিক ও জৈবিক বৈশিষ্ট্যের যে অবাঞ্চিত পরিবর্তন জীবের জীবনধারণকে ক্ষতিগ্রস্ত করে তাকেই দূষণ বলে। পরিবেশ দূষণের ফলে বিভিন্ন অসুখবিসুখের সৃষ্টি হয়। দূষিত পানি, বায়ু বা খাবার থেকে শরীরে বাসা বাধে দূরারোগ্য ব্যাধি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনে সর্বোচ্চ দূষিত কিছুসংখ্যক স্থানের তালিকা তৈরি করেছে। যেখানে সবচেয়ে দূষিত ১০টি স্থানের তালিকায় রয়েছে বাংলাদেশও৷

 

বাংলাদেশের পরিবেশ দূষণের হার কেন এত বেশী?

বিশ্বজুড়ে একযোগে প্রকাশিত বৈশ্বিক বায়ু পরিস্থিতি২০১৭ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা। এবং শীর্ষে রয়েছে ভারতের দিল্লি। একই প্রতিবেদনে তারা উল্লেখ করেছেন ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে বিশ্বে বায়ুদূষণ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে ভারত ও বাংলাদেশে। আর এই দূষণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির ঝুঁকিতে আছে বাংলাদেশ।

উক্ত প্রতিবেদনটিতে বায়ুদূষণের কারণে বাংলাদেশে বছরে ১ লাখ ২২ হাজার ৪০০ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে বলে বলা হয়েছে। আর বায়ুদূষণের কারণে শিশুমৃত্যুর হারের দিক থেকে পাকিস্তানের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।

পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্মল বায়ু ও টেকসই পরিবেশ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মনজুরুল হান্নান খান  বলেন, ‘সাধারণত শুষ্ক মৌসুমে ইটভাটাগুলো চালু থাকায় এবং ব্যাপকভাবে উন্নয়নকাজ হওয়ায় বাংলাদেশের শহর এলাকায়, বিশেষ করে ঢাকা ও চট্টগ্রামে দূষণের মাত্রা বেশি থাকে। (তথ্যসূত্র: প্রথম আলো)

দেশের বাতাসে দূষণ প্রতিদিনই বাড়ছে। আর রাজধানী ঢাকা বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দূষিত বায়ুর শহর। এই দূষণের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে মাত্রাতিরিক্ত ধুলা। নগরের বিভিন্ন স্থানে খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এই ধুলা হয়ে উঠেছে নিত্যসঙ্গী। এছাড়াও কয়লা ও জৈব জ্বালানি পোড়ানো, ইটভাটা, শিল্পকারখানার ধোঁয়া, যানবাহনের ধোঁয়া এবং সড়ক ও ভবন নির্মাণসামগ্রী থেকে তৈরি ধুলায় প্রতিদিন বাড়ছে পরিবেশ দূষণের মাত্রা।

পরিবেশ দূষণের এই তালিকায় নতুন যুক্ত হচ্ছে মাস্ক।

 

যেভাবে পরিবেশের ক্ষতি করছে মাস্ক

বিশ্বব্যাপী সংক্রমশীল করোনা ভাইরাসের বিস্তার রোধে ব্যবহৃত হচ্ছে মাস্ক। বাজারে পাওয়া যাচ্ছে নানান রঙ, ঢঙ ও বাহারী সাজের মাস্ক। বিশ্বব্যাপী কোটি কোটি মাস্ক-গ্লাভ্স-পিপিই’র উৎপাদন চলছে। স্যানিটাইজারও উৎপাদিত হচ্ছে টনে টনে। কিন্তু ব্যবহারের পর এসব বর্জ্যের গন্তব্য কোথায়? ব্যবহারের পর এসব মাস্ক বর্জ্য হিসেবে পুড়িয়ে ফেলার কথা। কিন্তু তা না করায় এসব মাস্ক তৈরি করছে নতুন বিপদ। ২০২০ সালে প্রায় ১৫০ কোটি মাস্ক সাগরে গিয়ে পড়েছে।মাস্কের বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান পরিবেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকরৎ

 

মাস্ক তৈরির কাঁচামাল

কাপড়ের তৈরি দুই স্তরের মাস্কের এর সাথে আরেকটি তৃতীয় স্তর যুক্ত করা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশী উপকার। নতুন এই তৃতীয় স্তরটিকে যুক্ত করার উপায় হলো পলিপ্রোপিলিন।  লেয়ারিং পরীক্ষা করা প্রতিটি গবেষণায় দেখা গেছে যে ফেস মাস্কগুলিতে অতিরিক্ত স্তর ব্যবহার করা পরিস্রাবণকে উন্নত করে তবে কিছু কাপড় অন্যের চেয়ে বেশি পরিস্রাবণ সরবরাহ করে। অর্থাৎ তিন লেয়ার বিশিষ্ট সকল মাস্কেই রয়েছে পলিপ্রোপিলিন। পলিপ্রোপিলিন সবচেয়ে হালকা অথচ শক্ত পলিমার প্লাস্টিক। কৃত্রিম সুতা, মোটা রশ্মি, কার্পেট, উন্নত মানের কন্টেইনার তৈরিতে এর ব্যাপক ব্যবহার আছে।

বর্তমানে পৃথিবী জুড়ে একটি আন্দোলন শুরু হয়েছে। তা হলো কীভাবে পরিবেশ দূষণের হাত থেকে এই পৃথিবী নামক গ্রহকে রক্ষা করা যায়। এই আন্দোলন কে আরো বেগবান করতে ১৯৭২ সালে জাতিসংঘের উদ্যোগে স্টকহোমে বিশ্ব পরিবেশ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং এর পর থেকে প্রতি বছর ৫ জুন দিনটি বিশ্ব পরিবেশ দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।প্রতিবছর এ দিবসটি গুরুত্বের সাথে পালনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো জনসাধারণ তাঁদের পরিবেশের ভারসাম্য, পরিবেশের বিপর্যয় এবং পরিবেশ সংরক্ষণ সম্পর্কে যাতে সচেতন হয়ে ওঠেন এবং সে সব সমস্যা সমাধানে যাতে এগিয়ে আসেন, সে বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা।

 

পরিবেশের এই সংকটপূর্ণ মহূর্তে আপনার দায়িত্

আপনি হয়তো ভাবছেন আমি একা একজন মানুষ মাস্ক মাটিতে ফেললেই কি বা পানিতে ফেললেই কি। বিশাল এই প্রকৃতির উপকার বা অপকার সাধন আমার দ্বারা সম্ভব না। এমনটা ভাববেন না।

কবি বলেন,

ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বালুকণা 

বিন্দু বিন্দু জল 

গড়ে তােলে মহাদেশ, সাগর অতল।

 

তাই আসুন আমরা সকলে স্ব-স্থান থেকে সচেষ্ট হই এবং সচেতনতা ছড়িয়ে দিয়ে এই পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখি।

 

 

 

বাংলাকোষে লিখুন, আয় করুন... [email protected] 
বিঃদ্রঃ বাংলাকোষ কোনো সংবাদপত্র নয়, এটি মূলত একটি আর্কাইভ। বাংলাকোষ এ প্রকাশিত সকল তথ্য কপিরাইট এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কোনো পূর্বানুমতি ছাড়া বাংলাকোষের কোনো তথ্য ব্যবহার করা যাবে না। তবে অব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সূত্রসহ ব্যবহার করতে পারবে।