প্রিন্সেস ডায়ানা: সৌন্দর্য ও ফ্যাশনের এক অদ্বিতীয় নারী

ইসরাত জাহান আনিকা: উনিশ শতকে বিশ্বের সর্বাধিক আলোকচিত্রিত নারী বলে বিবেচিত ও ইংল্যান্ডের গোলাপখ্যাত আইকনিক লেডি প্রিন্সেস ডায়ানা। ফ্যাশন, সৌন্দর্য, বিভিন্ন মানবসেবামূলক কর্মকান্ড, ভূমিমাইন বিষয়ক আন্দোলন তাকে এনে দিয়েছিল বিশ্বজোড়া খ্যাতি। ব্যক্তিগত সম্পর্ক নিয়েও গণমাধ্যমে সমালোচনায় এসেছেন বহুবার। শেষ পর্যন্ত গণমাধ্যমের অত্যাচার থেকে রেহাই পেতে গিয়েই দুর্ঘটনায় মারা যান প্রিন্সেস ডায়ানা। প্রিন্সেস ডায়ানার পারিবারিক পদবী ডায়ানা ফ্রান্সিস স্পেন্সার।

 

১৯৬১ সালের ১লা জুলাই নরফোকের সানড্রিংঘামের স্পেন্সার অভিজাত পরিবারে জন্ম নেন ডায়ানা। ডায়ানার বাবা জন স্পেন্সার ও মা ফ্রান্সিস শ্যান কিড। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। ডায়ানার যখন ৭বছর বয়স তখন বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে তার মা-বাবার। শেষঅবধি বাবার সাথেই শৈশব কাটতে শুরু করে ডায়ানার। অষ্টম আর্ল অব স্পেন্সার খেতাব পাওয়ার পর আর্লট্রপ থেকে পুরো পরিবার নিয়ে নর্থহ্যাম্পটোশিয়ার চলে আসেন ডায়ানার বাবা এডওয়ার্ড স্পেন্সার। বাবার এই খেতাব প্রাপ্তির পরই ডায়ানা পরিচিত হন লেডি ডায়ানা নামে।

 

নর্থহ্যাম্পটোশিয়ারে ডায়ানার বাবা পুনরায় বিয়ে করেন বিখ্যাত লেখিকা বারবার কার্টল্যান্ডকে। সৎ মার সাথে খুব একটা ভালো সম্পর্ক ছিলনা ডায়ানা ও তার ভাই চার্লসের। বাবার মৃত্যুর পর মাত্র ১৪ বছর বয়সে ডায়ানা পারিবারিক খেতাব পান নবম আর্ল অব স্পেন্সারের। একাডেমিক পড়াশোনায় খুব একটা ভালো করতে না পারলেও পিয়ানো বাজানো ও নাচে বিশেষ দক্ষতা ছিল ডায়ানার। খেলাধুলা ও সাঁতারে ছিলেন ভীষণ পটু। স্কুলের পড়া শেষ করে মাত্র ১৭ বছর বয়স থেকে ন্যানি হিসেবে কাজ শুরু করলেও পরে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন একটি কিন্ডারগার্টেনে। ডায়ানা মিডিয়ার নজরে আসতে থাকেন ব্রিটিশ রাজকুমার প্রিন্স চার্লসের সাথে সম্পর্কে জড়ানোর পর।

 

ব্রিটিশ রাজপরিবারের সাথে অবশ্য আগেই যোগাযোগ ছিল ডায়ানার পরিবারের। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের অপর দুই পুত্র এডওয়ার্ড ও এন্ড্রুর ছোটোবেলার খেলার সাথী ছিলেন ডায়ানা। প্রিন্স চার্লসের সাথে ১৬ বছর বয়সে প্রথম দেখা হয় ডায়ানার । সেসময় ডায়ানার বড় বোন লেডি সারাহর সাথে প্রেমের সম্পর্কে ছিলেন চার্লস।১৯৮০ সালে ডায়ানা প্রিন্স চার্লসের নজরে আসার পরপরই ধীরে ধীরে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন তারা। ১৯৮১ সালের ২৯ জুলাই বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত বিয়ের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজবধূর মর্যাদা পান ডায়ানা।তাদের এই জমকালো রাজকীয় বিয়ে টেলিভিশনের পর্দায় সরাসরি দেখেন প্রায় ৭৫ কোটি দর্শক। আর নবদম্পতিকে শুভেচ্ছা জানাতে রাস্তার দুইপাশে জমা হয় অন্তত ছয় লাখ মানুষ ।

 

এর মাধ্যমেই লেডি ডায়ানা থেকে প্রিন্সেস অব ওয়েলসের খেতাব পান ডায়ানা। রাজবধূ হয়েও রাজপরিবারের নিয়মের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন দাতব্য ও সমাজসেবামূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হন প্রিন্সেস ডায়ানা। মরণব্যাধি এইডস ও প্রাণনাশী ল্যান্ডমাইনবিরোধী আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা রাখেন ডায়ানা। ক্যান্সার আক্রান্ত ও ভূমিহীন শিশুদের নিয়ে কাজ করে ক্রমেই বিশ্ববাসীর মন জয় করে নেন প্রিন্সেস ডায়ানা। এসব কাজের সাথে যুক্ত হয়ে ক্রমেই রাজপরিবার ও স্বামী প্রিন্স চার্লসের কাছ থেকে দূরে সরে যেতে থাকেন ডায়ানা। পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজসেবামূলক কাজ আর ফ্যাশনেবল জীবনযাপনের জন্য সবসময়ই গণমাধ্যমের নজরে থাকতেন ডায়ানা। অবশেষে ১৯৯২ সালে চার্লসের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে ডায়ানার। যার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয় ১৯৯৬ সালে। জীবন নিয়ে উক্তি

 

বিবাহ বিচ্ছেদের পর ডায়ানার ব্যক্তিগত সম্পর্ক আরও বেশি নজরে আসতে থাকে গণমাধ্যমের। সর্বশেষ মিশরের ধনকুবের দদি ফায়েদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ডায়ানা। এই সম্পর্ক নিয়েও গণমাধ্যমে আলোচনার শীর্ষে থাকেন ডায়ানা। অবশেষে ১৯৯৭ সালের ৩১আগস্ট প্যারিসের এক হোটেল থেকে ডায়ানা ও দদি একদল ফটোগ্রাফারের হাত থেকে রক্ষা পেতে দ্রুতবেগে গাড়ি নিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে পড়েন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্যারিসের পন্ট দে ইয়ালমা টানেলে দূর্ঘটনায় প্রান হারান ডায়ানা, দদি ও গাড়িচালক হেনরি । ডায়ানার বিয়ের অনুষ্ঠানের মতোই আরেকটি রাজকীয় শেষকৃত্যে অনুষ্ঠানের সাক্ষী হয় বিশ্ববাসী। ৬সেপ্টেম্বর ওয়েস্ট মিনিস্টার এ্যাবেতে তার ও রাজপরিবারের সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে অসংখ্য ভক্ত চোখের জলে বিদায় জানান তাদের প্রিয় রানিকে। পৃথিবী ছেড়ে গেলেও তার মানবসেবামূলক কার্যক্রম আর ফ্যাশনেবল জীবনযাপনের জন্য প্রিন্সেস ডায়ানা পুরো বিশ্বে এখনো সবচেয়ে আলোচিত আইকন।

বাংলাকোষে লিখুন, আয় করুন... [email protected] 
বিঃদ্রঃ বাংলাকোষ কোনো সংবাদপত্র নয়, এটি মূলত একটি আর্কাইভ। বাংলাকোষ এ প্রকাশিত সকল তথ্য কপিরাইট এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কোনো পূর্বানুমতি ছাড়া বাংলাকোষের কোনো তথ্য ব্যবহার করা যাবে না। তবে অব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সূত্রসহ ব্যবহার করতে পারবে।