জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা যায় যে, যে শিক্ষার্থীরা তারা কি পড়ছে এবং তা কেন পড়ছে এবং সেই পড়াশুনা দৈনন্দিন জীবনে কিভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে এবং সেই জ্ঞানগুলোর উৎস কি অর্থাৎ যা পড়ছে তা কিভাবে জ্ঞান হয়ে তাঁদেরসামনে আসলো এবং একটা কথা আছে যে, প্রয়োজনীয়তাই সকল কিছুর আবিষ্কারক, তেমনি ঠিক কোন প্রয়োজনে ওই জ্ঞানের তৈরি হয়েছিলো তা জানে, সেই শিক্ষার্থীরা দশ-পনেরো-বিশ নয়, পাক্কা আশি শতাংশ ভালো মনে রাখতে পারে।
তবে “Caught Red Handed” এর আড়ালের গল্প জেনে শুরু করা যাক। কি করে এসেছে এই প্রবচন? নিশ্চয়ই এই ইংরেজী প্রবচনটা আমরা সবাই শুনেছি। না শুনে উপায়ও নেই অবশ্য! কারন,এই প্রবচনটি বাংলাদেশ,ভারত সহ বিশ্বের প্রায় সব কটা দেশেই একদম পাঠ্যবইয়েই অন্তর্ভুক্ত করা থাকে।তাই হয়তো অনেককে একরকম বাধ্য হয়েই শুনতে হলেও হতে পারে।আর নেইটিভরা তো সচরাচর বলেই।
প্রিয় পাঠক, “Caught Red Handed” মানে হচ্ছে হাতে নাতে ধরা পড়া। প্রাচীন একটা আইন ছিল এমন যে, কেউ যদি কোনো প্রাণী হত্যা করে, যে প্রাণী তার নিজের নয়,সে যদি ওই প্রাণীর মাংস সমেতও ধরা পড়ে, তার কোনো বিচার হবেনা! অদ্ভূত তো!
কিংবা তার এই চুরির ব্যাপারটি যদি পরে অন্য কোনো সময়েও প্রকাশিত হয়ে যায়,তাতেও তার কোনো বিচার হবেনা, এমনকি যদি একটু আগেও তার হাতে রক্ত লেগে ছিলো, কিন্তু ঠিক এই মুহূর্তে তার হাত পরিষ্কার আছে,তার বিচার হবেনা! তার শুধুমাত্র তখনই শাস্তি হবে,যখন সে ওই প্রাণীর রক্ত লেগে থাকা অবস্থায় ধরা পড়বে।
দেয়ালের ও কি কান আছে?
এবার আরেকটা উদাহরণ দেখা যাক,
প্রিয় পাঠক, “The Walls Have Ears”? দেয়ালের কি সত্যিই কান আছে? এই! এই! আস্তে কথা বলো!! দেয়ালেরও কান আছে। হ্যাঁ, আমরা এই কথাটা বাংলায় প্রায়ই শুনি। প্রায়ই বলতে শোনা যায়, আস্তে কথা বলো,দেয়ালেরও কান আছে অর্থাৎ কেউ হয়তো শুনে ফেলবে। “The Walls have ears.” এর মানে টা কি? মানে হচ্ছে, “Be careful of what you are saying as someone may be eavesdropping.”!
অর্থাৎ দেয়ালের ওপাশ থেকে কেউ একজন কিছু একটা শুনে ফেলতে পারে,সুতরাং সাবধানে কথা বলো, কি বলছো সেটা বুঝে শুনে কথা বলো। কিন্তু, আমরা কি জানি,এই “The Walls have ears” এর উৎপত্তি কোন জায়গা থেকে? এই প্রবাদ এর শুরুটা কি করে হলো? ইংরেজী ভাষায় টুপ করে আকাশ থেকে পড়েছে কিনা!! হ্যাঁ! প্যারিসের ল্যুভর প্রাসাদে, পুরো প্রাসাদ জুড়ে হাজার হাজার লিসেনিং টিউব এর সমন্বয়ে একটা টিউব নেটওয়ার্ক তৈরী করা আছে। লিসেনিং টিউব এর এই বিশাল নেটওয়ার্ক কি কাজে লাগতো? হ্যাঁ, রাণী দ্যা ক্যাথেরিন দি মেদিসি , কোনো পলিটিক্যাল ক্যু তথা রাজনৈতিক চক্রান্ত হচ্ছে কিনা, তার বিরুদ্ধে কোনো পরিকল্পনা হচ্ছে কিনা তা খুঁজে বের করার জন্য, এইভাবে, ঠিক এইভাবেই পুরো প্রাসাদ জুড়ে একটা লিসেনিং টিউব এর নেটওয়ার্ক তৈরি করেছিলো, এবং প্রত্যেকটা রুমে রুমে একটা একটা টিউব দেয়া ছিল। যাতে করে তিনি জানতে পারতেন, প্রত্যেকটা রুমে কি কথা হচ্ছে, এবং তার বিরুদ্ধে কোনো ষড়যন্ত্র হচ্ছে কিনা!
এবার তাহলে জানবো , আরেকটা বহুল পরিচিত প্রবাদ “Bury the hatchet” সম্পর্কে! Hatchet মূলত কি? যাদের ইন্দ্রিয়গুলো খুব ভালো কাজ করে, তারা হয়তো ইতোমধ্যেই প্রবাদটা দ্বারা কি বোঝায় তা পুরোপুরি উপলব্ধিতে না আনতে পারলেও কাছাকাছি গেছেন নিশ্চয়ই। “Bury the hatchet” এর মানে হচ্ছে,যতো ঝুট ঝামেলা আছে,যতো দ্বন্দ্ব আছে, একজন আরেকজনের সাথে পারস্পরিক যেসব ঝামেলা ,অসন্তোষ আছে,সেসব মিটিয়ে ফেলাই “Bury the hatchet”! হ্যাঁ, এই প্রবাদ তবে আসলো কিভাবে? শিক্ষামূলক উক্তি
উল্লেখ্য,পিউরিটান এবং নেইটিভ আমেরিকানদের মধ্যে এক রকম দ্বন্দ্ব ছিল! তো এক পর্যায়ে তারা মনে করলো, হ্যাঁ, আমাদের দুপক্ষের মধ্যে বিরাজমান দ্বন্দ্বটা মিটিয়ে ফেলা দরকার। যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে উভয় পক্ষেরই। সুতরাং, দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলাটাই উত্তম! কিন্তু দু পক্ষের কাছে তখনো অস্ত্র আছে।এতো অস্ত্র মাটি চাপা দেবার ও শখ নেই কারো! কারন, এই দু পক্ষ ছাড়াও তো বাইরে আরো অনেক প্রতিপক্ষ থাকতে পারে , যে কেউ এই দু পক্ষের যে কোনো পক্ষকেই যেকোনো সময় আক্রমণ করে বসতে পারে। এসব কথা মাথায় রেখে তাদের দু পক্ষের কোনো পক্ষই অস্ত্র জমা দেয়নি এবং তাঁদের সন্ধির স্মারকস্বরূপ হ্যাচেট নামক এক পাথর দু পক্ষ মিলে মাটি চাপা দেয় বিবাদ মেটাবার প্রতীক হিসেবে এবং নিজেদের মধ্যকার বিবাদ মিটিয়ে ফেলে। আর এভাবেই ইংরেজীতে যুক্ত হয়ে যায় নতুন একটা প্রবাদ।
আচ্ছা , “Cold feet” এর অর্থ কি? ঠান্ডা পা , খুবই ঠান্ডা পা অথবা ঠান্ডায় একদম জড় হয়ে যাওয়া পা? একদম ঠিক এটাই যদি না বুঝায় অন্তত কাছাকাছি কিছু একটা তো হতেই পারে। যাই হোক, দেখা যাক! “Cold feet” বলতে বোঝায় , খুবই নার্ভাস অবস্থায় আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলা ভেতরে ভেতরে জমে যাওয়া। যখন মাথায় কোনোকিছুই কাজ করবেনা,আকস্মিকতায় স্তম্ভিত হয়ে যাওয়াই “Cold feet”. তবে ইদানিং এই প্রবাদটার বদলে অন্য আরেকটা প্রবাদ ব্যবহৃত হচ্ছে, “Arrow in the knee”. আপনার হাঁটুতে যদি একটা তীর বিদ্ধ হয়, আপনার কি মনে হয়? আপনি হাঁটতে পারবেন?অবশ্যই না! ঠিক এভাবেই ইদানিং Cold feet এর বদলে ব্যবহৃত হচ্ছে Arrow in the Knee. এবং উল্লেখযোগ্য, এই দুটো টার্মই কিন্তু সামরিক বাহিনীতে বহুল ব্যবহৃত টারম।কিন্তু কোল্ড ফিট এর কাহিনী কি? হ্যাঁ, যুদ্ধের ময়দানে যদি কোনো একজন ভয় পেয়ে বা যেকোনো কারনে আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, তখন তার পা কিন্তু আর চলবে না। তখন তার পা জড়োসড়ো হয়ে যাবে। জড়তা নিয়ে সে আর দৌড়াতে পারবে না। দৌড়ে যুদ্ধে অংশ নিতে পারবে না।আর এভাবেই ইংরেজী ভাষায় নিজের জায়গা করে নিয়েছিলো, “Cold Feet” প্রবাদটি!
কখনো সারেনি যেই ক্ষত!
এখন আমরা একটা গল্প পড়ি কেমন!গল্পটা অ্যাকিলিসের গল্প!
“He was working diligently but his asthma problem was his Achilles heel!”
তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তার অ্যাজমা সমস্যাই তার প্রধান দুর্বলতা।অ্যাকিলিস হিল মানে হচ্ছে, “দুর্বলতা” অথবা “দুর্বল জায়গা”। প্রিয় পাঠক, আমরা একেবারে ছোটবেলা থেকেই যারা ইংরেজী শিখছি তারা কম করে হলেও অন্ততপক্ষে একবার এই প্রবাদের কথা শুনেছি।
তবে এই প্রবাদটাও কি টুপ করে আকাশ থেকে পড়েছে? অবশ্যই না! প্রিয় পাঠক, অ্যাকিলিস গ্রিক পুরাণের এক মহাবীর যোদ্ধার চরিত্র!
সমুদ্র দেবী থেটিস
যার মা ছিলেন থেটিস! থেটিস কে মতান্তরে সমুদ্র দেবীও বলা বলা হয়। কিন্তু একজন টাইটান হওয়ার দরুণ তাকে সমুদ্র দেবী বলে বিবেচনা করা হতোনা! তাই বিতর্কটা আজও বিবাদমান অর্থাৎ টাইটান বিধায় থেটিস এর সমুদ্র দেবীর মর্যাদা পাওয়া না পাওয়া নিয়ে এখনো এখনো বিতর্ক চলে , গবেষণা চলে। সে যতোই বিতর্ক চলুক আর না চলুক, থেটিস এর কাছে যে দেবীসম প্রবল ক্ষমতা ছিল,আর থেটিস যে পরাক্রমশালী তা নিয়ে কোনো বিশ্লেষকেরই কোনো সন্দেহ নেই।কিন্তু এই থেটিসই কোনো এক ভবিষ্যৎ দ্রষ্টার কাছ থেকে শুনেছিলো যে, তার সন্তান অ্যাকিলিস হতে যাচ্ছেন একজন মহাবীর। কিন্তু জগতে যতো মা আছে, প্রত্যেক মায়েরই তাঁদের সন্তানদেরকে নিয়ে একটু আধটু চিন্তা থেকেই যায়। স্বভাবতই থেটিসেরও তার ভবিষ্যৎ বীর সন্তানের জন্য দুশ্চিন্তা হচ্ছিলো। যেই ভাবা সেই কাজ!
গ্রীক পুরাণ অনুযায়ী, স্বর্গ এবং মর্ত্যের মাঝামাঝি স্টিচ/স্টিক্স নামে একটা নদী আছে।স্টিচ নদী, অত্যন্ত গভীর এ নদীর পানি কখনো ফুরায়না! আর এতো বড় অলৌকিক স্বর্গীয় নদী তা ও আবার নিজের আওতাধীন, তিনি ভাবলেন সমুদ্রদেবী হিসেবে তার তো কিছু করার আছে। তিনি তার সন্তানকে স্টিচ নদীর পানিতে ডুবিয়ে দিলেন।
শুধুমাত্র তার গোড়ালিটুকু নিজের হাতে ধরে রেখেছিলেন, ছোট বাচ্চা! ডুবেও তো যেতে পারতো। তবে সযতনে নিজের হাতে গোড়ালিটুকু ধরে রেখে পুরো ভিজিয়ে নিলেন নিজের সন্তানকে স্বর্গ নদী স্টিচ এর পানিতে। এই ছোট বাচ্চাই সময়ের পরিক্রমায় হয়ে ওঠে মহাবীর।যখন মহাবীর এই যোদ্ধা একের পর এক যুদ্ধ জয় করে যেতে লাগলো, তখন স্বাভাবিকভাবেই তার মায়ের কোনো চিন্তা ছিলনা।কারন তিনি তো তার সন্তানকে স্টিচ নদীর পানিতে ডুবিয়েছিলেন। সুতরাং স্বভাবতই তার সন্তানকে কোনো ধরনের আঘাত, জরা , দুর্দশা স্পর্শ করার কথা না।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, তিনি তার সন্তানের গোড়ালি ধরে রেখেছিলেন, অর্থাৎ শুধুমাত্র গোড়ালিটুকুই স্বর্গের নদীর পানিতে ভেজেনি। আর বিশেষভাবে দুর্ভাগ্যজনক ব্যাপার হচ্ছে, যুদ্ধ কৌশলে অ্যাকিলিসের সেনাবাহিনীর তুলনায় বিরোধী পক্ষ প্যারিসের সৈন্যদল একেবারেই ভঙ্গুর এবং শতভাগ খারাপ। মহাবীর অ্যাকিলিস যখন তার সৈন্যদলের তুলনায় শিশুন্যায় এই প্যারিসের সৈন্যবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে যান, খুবই অনুমেয় যে সহজেই অ্যাকিলিস জিতে যাবে। জিতেও গেছে এই অ্যাকিলিসই! দুর্বল রণকৌশল হলেও তবে প্যারিস সেনাবাহিনীতে ছিল দক্ষ তীরন্দাজের প্লাটুন প্লাটুন সমাহার। যুদ্ধে জিতে গেলেও যুদ্ধের একেবারে শেষের দিকে অ্যাপোলো নামের এক তীক্ষ্ম তীরন্দাজের তীর এসে অ্যাকিলিসের গোড়ালিতে বিদ্ধ হয়।
যুদ্ধ থেকে পাওয়া আঘাত থেকে জন্ম নেয়া অ্যাকিলিসের সমস্ত ক্ষত,শরীরে বাসা বাঁধা সমস্ত রোগ সেরে যায়, কিন্তু গোড়ালিতে অ্যাপোলোর তীর বিদ্ধ হয়ে তৈরি হওয়া ক্ষত আর কখনো সারেনি!! এবং পায়ের ওই ক্ষত নিয়েই মারা যান মহাবীর অ্যাকিলিস!
আর গোড়ালির ওই ক্ষততেই অ্যাকিলিসের অকাল প্রয়াণ এর সাথে সাথেই জন্ম নেয় নতুন এক প্রবাদ, “Achilles Heel”.
আচ্ছা, আপনার কি মনে হয়? এই “Cold feet, Bury the hatchet, caught red handed, The walls have ears” এই প্রবচন আর প্রবাদগুলো আর জীবনে ভুলবেন?
জর্জিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির এক গবেষণায় দেখা যায় যে, যে শিক্ষার্থীরা তারা কি পড়ছে তা কেন পড়ছে এবং সেই পড়াশুনা দৈনন্দিন জীবনে কিভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে এবং সেই জ্ঞানগুলোর উৎস কি অর্থাৎ যা পড়ছে তা কিভাবে জ্ঞান আকারে তাঁদের সামনে এসেছে এবং একটা কথা আছে যে, প্রয়োজনীয়তাই সকল কিছুর আবিষ্কারক, তেমনি ঠিক কোন প্রয়োজনে ওই জ্ঞানের তৈরি হয়েছিলো তা জানে, সেই শিক্ষারথীরা দশ-পনেরো-বিশ নয়, পাক্কা আশি শতাংশ ভালো মনে রাখতে পারে। সবসময়ই সব বিষয়েই একদম গহীন সাগর থেকে মুক্তো কুড়িয়ে আনার মতো সাগরের তলদেশে যেতে হবে। শিকড় ছাড়া গাছের অস্তিত্ব নেই! তাই শিকড়ে পৌঁছাতে হবে! আড়ালের গল্পগুলো জানতে হবে! আপনার গোড়া শক্ত থাকলে, আপনাকে হারায় কে?
তাই এখন থেকে বরং একটু বেশি জানার আগ্রহ করুন। আড়ালের গল্পটা জানুন, আপনাকে হারায় কে?