বজরা শাহী মসজিদ

বজরা শাহী মসজিদ

অবস্থানঃ

নোয়াখালী জেলার সোনাইমুড়ী উপজেলার বজরা গ্রামে। নোয়াখালী সদর উপজেলা থেকে বজরা গ্রামের দূরত্ব মাত্র ১৭ কিলোমিটার। এটি নোয়াখালী সদর থেকে উত্তর দিকে অবস্থিত।

কেন যাবেন ,কি দেখবেনঃ 

বজরা গ্রামে গেলে দেখবেন সুউচ্চ একটি মসজিদ দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদটির সৌন্দর্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। মসজিদটির নির্মাণ কৌশল দেখলে আপনে অবাক হবেন। বর্তমানে এ ধরনের নির্মাণ কৌশল একটি বিরল দৃষ্টান্ত। অত্যান্ত মূল্যবান ও খুব সৌন্দর্য মণ্ডিত পাথর দাঁরা মসজিদটি নির্মিত। মসজিদটিতে প্রবেশ করার জন্য রয়েছে ধুনুক আকৃতির নকশা করা দরজা।

মসজিদটির শিলালিপিতে লেখা রয়েছে, “ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম, লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ”। মসজিদেরের চত্বরের আজান খানাটিও পাথর দ্বারা কারুকার্য করা। মসজিদের ভেতরেও দেখতে অনেক সুন্দর। মসজিদের সামনের দীঘিটি ও আপনাকে মুগ্ধ করবে।

সংক্ষিপ্ত ইতিহাসঃ

বজরা শাহী মসজিদ একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। এটি প্রায় তিনশত বছর পূর্বে তৈরি হয়েছিল। দিল্লীর বাদশা মুহাম্মদ শাহের শাসনের সময় দিল্লীর শাহী মসজিদের অনুকরণে বজরা শাহী মসজিদ নির্মাণ করা হয়। এ মসজিদটি বর্তমান কালে সাক্ষী হয় মোগল স্মৃতি বহন করে চলছে। বজরা শাহী মসজিদ  নির্মাণ করা হয়েছিল ১৭৪১ সালে ( হিজরি ১১৫৪, বাংলা ১১৩৯ ) দিল্লীর মোগল সম্রাট মোহাম্মদ শাহের আমলে তার রাজ্যের ( দরবারের ) সহকর্মী শাহ আমান উল্লাহ ও আমান উল্লাহ্‌র ভাই দানা উল্লাহ্‌র নামে বজরা অঞ্চলের  মানুষের কল্যাণের কথা চিন্তা করে তারা তাদের বাড়িতে ৩০ একর জমির উপর একটি বিশাল দীঘি খনন করেন। এ অঞ্চল ছিল ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে অগ্রময়। ইসলাম প্রচারের জন্য বিভিন আলেম ওলামা এ অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। ফলে ইসলাম প্রচারের কথা চিন্তা করে জমিদার শাহ আমান উল্লাহ দিঘির পাশে ঐ মসজিদটি নির্মাণ করেন। মসজিদটি নির্মাণ করতে ব্যবহৃত হয়েছিল চীনা গ্লাম। ১১৬ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৭৪ ফুট প্রস্থের মধ্যে ৫৪ ফুট দৈর্ঘ্য ও ২৭ ফুট প্রস্থ  এবং ২০ ফুট উচ্চতা বিশিষ্ট তিনটি আকর্ষণীয় গুম্বুজ রয়েছে। মসজিদটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে প্রায় ২৫ বছর। মসজিদটি স্থায়িত্বের কথা চিন্তা করে উচ্চতা ২০ ফুটের সমান আরও ২০ ফুট মাঠির নিচেও রাখা হয়েছে। অর্থাৎ উপরে ২০ ফুটের সমান আরও ২০ ফুট মাঠির নিচে আছে। মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে দিল্লীর মোগল সম্রাট মোহাম্মদ শাহের নির্দেশে ও মিয়া অম্বর নামে এক ব্যক্তির আর্থিক সহায়তায়।

মসজিদটি নির্মাণ এর পর দিল্লীর বাদশা সম্রাট মোহাম্মদ শাহের অনুরোদে পবিত্র মক্কা শরীফের নামকরা আলেম হজরত মাওলানা শাহ আবু বকর সিদ্দিকীকে ১ম ইমাম হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। মসজিদের ১ম ইমাম হজরত মাওলানা শাহ আবু বকর সিদ্দিক ১৭৪১ সাল থেকে ১৭৯৬ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ৫৫ বছর এ মসজিদের ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন। অর্থাৎ তিনি মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত এখানেই ইমামতি করেছিলেন। হজরত মাওলানা শাহ আবু বকর সিদ্দিকী মৃত্যুর পর মসজিদটির ইমামাতির দায়িত্ব নেন তার পুত্র হজরত মাওলানা মোহাম্মদ ইসমাইল সিদ্দিকী। তিনি ১৮৪৭ সাল পর্যন্ত প্রায় ৫১ বছর এ মসজিদের ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন। হজরত মাওলানা মোহাম্মদ ইসমাইল সিদ্দিকী মৃত্যুর পর মসজিদটির ইমামাতির দায়িত্ব নেন তার পুত্র হজরত মাওলানা মির্জা মুহাম্মদ আবুল খায়ের সিদ্দিকী। তিনি ১৮৯০ সাল পর্যন্ত প্রায় ৪০ বছর এ মসজিদের ইমামতির দায়িত্ব পালন করেন। এভাবে একে একে এই বংশের উত্তরসরীরা এ মসজিদের ইমামতির দায়িত্ব পালন করে আসছেন। বর্তমানে এ মসজিদের ইমামতির দায়িত্ব পালন করছেন  মসজিদের ১ম ইমাম হজরত মাওলানা শাহ আবু বকর সিদ্দিকীর ৭ম বংশধর হাসান সিদ্দিকী। এ মসজিদের দায়িত্ব পালনকারী প্রায় সকলেরই কবর এখানে বিধ্যমান আছে।

মসজিদটি তৈরির ১৬৮ বছর পর ১৯০৯ সালে এটিকে সংস্কার করা হয়। এলাকার জনগণের দীর্ঘ দিনের দাবির মুখে ১৯৯৮ সালে ২৯ নভেম্বর শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশের সরকার বজরা মসজিদটিকে প্রত্নসম্পদ হিসেবে ঘোষণা করেন। মসজিদের পাশের দিঘিটি বর্তমানে অনেক ছোট হয়েগেছে। বর্তমানে মসজিদটির বেশির ভাগ যায়গাই দখল হয়ে গেছে। মসজিদটির  দক্ষিণ – পূর্ব কোনে মসজিদটির প্রতিষ্টাতা/ নির্মাতা/ জমিদার শাহ আমান উল্লাহ ও আমান উল্লাহ্‌র ভাই দানা উল্লাহ্‌র এবং তাদের মায়ের কবর বিদ্যমান আছে। মসজিদটি আজ তার সৌন্দর্য হারাতে বসেছে। এটি সংস্কারের জন্য  কোন উদ্যোগ এখনও গ্রহণ করা হয়নি। মসজিদটি একনজর দেখার জন্য দেশি বিদেশী অনেক পর্যটক ঘুরতে আসে। মসজিদটির উন্নয়ন ও ব্যয় নির্বাহের জন্য এর প্রতিষ্টা জমিদার শাহ আমান উল্লাহ এটিকে ওয়াকফ এর আওতাভুক্ত করে। কিন্তু বর্তমানে মসজিদটির জমিগুলো খাস জমি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় এটির কনো উন্নয়ন হছেনা। সরকার উদ্যোগ নিলে মসজিদটি বিশাল জায়গাকে পর্যটন অঞ্চল হিসেব গড়ে তুলা সম্ভব।

যাতায়াত ব্যবস্থাঃ

নোয়াখালী জেলা সদর মাইজদী হতে শোনাইমুড়ীর বাসে উঠে বজরা হাসপাতালের সামনে নামবেন। এখান থেকে রিক্সা অথবা হেটে বজরা শাহী মসজিদে যেতে পারেন। বজরা হাসপাতাল থেকে মসজিদটির দূরত্ব মাত্র ১০ মিনিটের পথ। নোয়াখালী সদর থেকে সিএনজিযোগেও আপনি সরাসরি বজরা মসজিদ যেতে পারবেন।

ঢাকা থেকে ট্রেনে অথবা বাসেও মাইজদী যেতে পারেন। ঢাকা থেকে উপুকূল নামে একটি ট্রেন সকাল ৬ টায় ছাড়ে। এটি পৌছতে সময় লাগে ৮ ঘন্টা। এছাড়া আপনি বিলাস অথবা পালকি পরিবহনে মাইজদী যেতে পারেন।

কোথায় থাকবেনঃ

সোনাইমুড়ী উপজেলায় থাকা খাওয়ার তেমন সুব্যবস্থা নেই। তাই আপনাকে বজরা থেকে আবার নোয়াখালী শহরে চলে আসতে হবে। নোয়াখালী সদরে থাকা খাওয়ার সুব্যবস্থা আছে।

সম্ভাব্য খরচঃ

নিকটবর্তী অন্যান্য দর্শনীয় স্থানঃ

লেখকঃ এম এম রেদোয়ান আহমেদ মাসুদ রানা

 

বাংলাকোষে লিখুন, আয় করুন... [email protected] 
বিঃদ্রঃ বাংলাকোষ কোনো সংবাদপত্র নয়, এটি মূলত একটি আর্কাইভ। বাংলাকোষ এ প্রকাশিত সকল তথ্য কপিরাইট এর অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং কোনো পূর্বানুমতি ছাড়া বাংলাকোষের কোনো তথ্য ব্যবহার করা যাবে না। তবে অব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সূত্রসহ ব্যবহার করতে পারবে।